শৈশবে ঈদের সালামির অপেক্ষা ছিল কতই না আনন্দের! চকচকে নতুন নোট হাতে পেলে মনে হতো, যেন ইচ্ছেমতো খরচ করার এক অদ্ভুত স্বাধীনতা পেয়েছি। সময়ের পরিক্রমায় এখন হয়তো আপনিও সালামি দেওয়ার ভূমিকায়, যা এক আলাদা আনন্দ বয়ে আনে।
তবে সালামি পাওয়ার সেই শৈশবসুলভ উচ্ছ্বাসের অনুভূতিকে হয়তো এখনও এগিয়ে রাখবেন। কেউ নগদ অর্থ দেন হাতে, কেউ বা আবার সুন্দর খামে ভরে উপহার দেন। আধুনিক যুগে এসেছে ডিজিটাল সালামির প্রচলনও। শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম সমাজেও ঈদে ছোটদের সালামি দেওয়ার ঐতিহ্য বহুদিন ধরেই বিদ্যমান।
সালামির ইতিহাস
অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, সালামি বা ‘ঈদি’ প্রথার সূচনা হয়েছিল দশম শতাব্দীতে ফাতিমীয় খেলাফত আমলে, মিসরে। সে সময় রাজকোষ থেকে সাধারণ জনগণের জন্য ঈদের উপহার দেওয়া হতো। এটি শুধু নগদ অর্থেই সীমাবদ্ধ ছিল না; পোশাক, মিষ্টি কিংবা ফলমূলও শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে বিতরণ করা হতো।
রাজকোষ থেকে পারিবারিক ঐতিহ্য
সময়ের বিবর্তনে এই ঐতিহ্য রাজপরিবার থেকে পারিবারিক পরিসরে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৫০০ বছর পর, অটোমান সাম্রাজ্যের অবসানের পরও এটি একটি পারিবারিক প্রথা হিসেবে স্থায়ী হয়ে যায়। ধীরে ধীরে বিভিন্ন দেশে ঈদের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠে এই সালামি দেওয়ার রীতি।
দেশে দেশে সালামির প্রচলন
আমাদের দেশে একে ‘সালামি’ বলা হলেও ভারত ও পাকিস্তানে এটি পরিচিত ‘ঈদি’ নামে। আরব শিশুরা একে বলে ‘ঈদিয়াহ’। ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় এটি পরিচিত ‘রায়া’ নামে। যদিও নাম ভিন্ন, তবে সালামি পাওয়ার আনন্দ সব শিশুর কাছেই একই রকম। অনেক দেশে সালামির পাশাপাশি মিষ্টি ও চকলেটও উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।
বড়দের জন্যও সালামি!
শুধু শিশুরাই নয়, বড়রাও অনেক সময় সালামি পেয়ে থাকেন। অনেক পরিবারের প্রবীণরা সন্তানতুল্য আত্মীয়দের নিয়ম করে সালামি দেন। অনেক অফিসেও ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে সিনিয়র সহকর্মীদের কাছ থেকে সালামি নেওয়ার মজার প্রচলন রয়েছে।
ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিন
পরিবারের শিশুদের সালামি তো দিবেন, তবে ঈদের আনন্দ যেন সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা, বাড়ির সহকারী, নিরাপত্তারক্ষী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের শিশুদেরও মনে রাখুন। সামান্য কিছু উপহার দিয়েও তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারেন। তবেই ঈদের আনন্দ হবে সম্পূর্ণ ও অর্থবহ।