বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে রাখা হলো জাতীয় স্টেডিয়াম। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এক প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ক্রীড়া সচিব আমিনুল ইসলাম। দেশের ঐতিহাসিক এই স্টেডিয়ামের পেছনে আছে বেশ কিছু প্রেক্ষাপট। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭১ কিংবা ২০০০ সাল পরবর্তী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই স্টেডিয়াম।
১৯৫৪ সালে মতিঝিলের প্রাণকেন্দ্রে নির্মিত হয় বাংলাদেশের জাতীয় ও প্রধান স্টেডিয়াম। শুরু থেকেই স্টেডিয়ামটি ‘ঢাকা স্টেডিয়াম’ নামে পরিচিত ছিল। এছাড়া এক নম্বর স্টেডিয়াম নামেও ডাকা হতো এই ভেন্যুকে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আসার পর ১৯৯৮ সালে স্টেডিয়ামটির নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের বেশ কিছু স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে। ঐতিহাসিক এই ভেন্যুর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে জাতীয় স্টেডিয়াম। নতুন এই নামকরণ করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ । শনিবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব আমিনুল ইসলামের সাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি জানানো হয়।
ঢাকার পল্টন এলাকায় এর অবস্থান। আগে এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতো সব ধরনের খেলাই । বর্তমানে স্টেডিয়ামটি শুধু ফুটবল এবং অ্যাথলেটিকসের মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর দর্শকধারণক্ষমতা প্রায় ৩৬ হাজার।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা স্টেডিয়াম ব্যবহৃত হয়েছে ভিন্নভাবে। ১৬ ডিসেম্বরের পর ঢাকা স্টেডিয়াম পরিণত হয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ছাউনিতে। স্বাধীনতার পরপর অগোছালো দেশে ঢাকা স্টেডিয়াম থেকেই আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতেন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক ও অফিসাররা।
২০০৫ সালের ১ মার্চ পর্যন্ত স্টেডিয়ামটি ক্রিকেট দলের নিজস্ব মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরে এখান থেকে ক্রিকেট সরে যায় মিরপুর শের ই বাংলা স্টেডিয়ামে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম পৃ্থিবীর একমাত্র স্টেডিয়াম যেখানে দু’টি ভিন্ন দেশের উদ্ভোধনী টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৫৫ সালে ঢাকা স্টেডিয়ামেই ভারতের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ‘হোম’ টেস্ট ম্যাচটি খেলেছিল পাকিস্তান। তার ৪৫ বছর পর এ মাঠেই বাংলাদেশ খেলে অভিষেক টেস্ট, প্রতিপক্ষ সেই ভারতই। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বক্সিং-কী হয়নি এ মাঠে! দেশের ফুটবল ইতিহাসের বেশির ঐতিহাসিক ফুটবল ম্যাচের সাক্ষী এ মাঠ।
১৯৮৫, ১৯৯৩ আর ২০১০ সালের সাফ গেমসের উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের পর ২০১১ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর্দা উঠেছিল এ মাঠেই। সে বছরই লিওনেল মেসি, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, গঞ্জালো হিগুয়েইন, সার্জিও আগুয়েরো, হাভিয়ের মাচেরানো, ওবি ডি মিকেল, ভিনসেন্ট এনিমিয়ারা আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়ার আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ মাতিয়েছিলেন এ মাঠেই। ২০০৬ সালে জিনেদিন জিদান এসেছিলেন ঢাকা স্টেডিয়ামে। এছাড়া বক্সিং কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলীরও স্পর্শ পেয়েছে ঐতিহাসিক এই ভেন্যু।