দেশে জনগণের ঘাড়ে এখন ২০ লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ। যার ১৮ লাখ কোটিই রেখে গেছে পতিত শেখ হাসিনার সরকার। ১৫ বছরে ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৬ গুণ। এ ঋণে ডুবিয়ে উন্নয়নের গল্প বানাতেন শেখ হাসিনা, যা পরিশোধে চাপ বাড়ছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পতিত সরকারের যথাযথ ঋণ ব্যবস্থাপনা না থাকায় দেশি উৎস থেকে বেশি ঋণ নেয়া হয়েছে। আবার বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে বাছবিচারহীনভাবে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে সরকারের ঋণের পরিমাণ ২০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ ছিল ১০ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। বাকিটা অভ্যন্তরীণ ঋণ।
ব্যয় মেটাতে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উৎস থেকে ক্রমাগত ঋণ করেছে পতিত শেখ হাসিনা সরকার। আবার এ ঋণের অর্থ থেকে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারও হয়েছে।
তথ্যমতে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ যখন সরকারের দায়িত্ব নেয়, তখন দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে শেখ হাসিনা জাতির কাঁধে রেখে যায় ১৮ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকার ঋণের বোঝা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ ছিল ১০ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ১৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এই কয়েক বছরে তিনি ঋণ করেছেন। এবং শেষের তিন বছরে এই বড় বড় প্রকল্পের নামে প্রচণ্ডভাবে ঋণ নিয়ে ঋণকে ১০০ বিলিয়ন ডলার পার করে দিয়েছেন। এভাবে খামখেয়ালি উন্নয়নের গল্প রচনা করে তিনি ঋণের সাগরে ফেলে গেছেন।
তিনি বলেন, অর্থগুলো আত্মসাৎ করে বিদেশে নেওয়া হয়েছে। এ কারণে ব্যাংকিং সেক্টর যাতে কলাপস না করে, সে জন্য বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর মোটামুটি একটা স্বস্তির অবস্থায় নিয়ে এসেছেন। কিন্তু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট পালিয়ে যাওয়ার আগে হাসিনা প্রতিবছর মাথাপিছু জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছেন। যাকে জনগণের সঙ্গে বড় ধরনের প্রতারণা বলে মনে করেন তারা। হাসিনার শাসনামলে নেওয়া হয় একের পর এক মেগা প্রকল্প। প্রতিটি মেগা প্রকল্পে প্রকৃত ব্যয়ের তিন-চার গুণ বেশি ব্যয় দেখানোর মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয় লাখ লাখ কোটি টাকা।
বিশাল অঙ্কের ঋণের কিস্তি পরিশোধের দায় মেটাতে, কমপক্ষে আগামী এক দশক দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে ডুবে থাকবে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।