shrestonews
ঢাকাআজ: শুক্রবার,১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ/১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সাবেক আইনমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে সুবিধা নিতেন ওসি দেলোয়ার

বিশেষ প্রতিবেদক
জানুয়ারি ২, ২০২৫ ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ । ১০২ জন
Link Copied!
একাত্তর পোস্ট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

২০১৭ সালে সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত’র স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তা উপ-নির্বাচনে জয়ী হলে সুচতর সুবিধাভোগী পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল হকের আত্মীয় পরিচয়ে নিজেকে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার দোহাই দিয়ে শাল্লা থানায় অফিসার ইনচার্জ ওসি হিসাবে পোষ্টিং বাগিয়ে নেন।

ওসি দেলোয়ার ব্রাম্মণবাড়িয়া জেলার বাসিন্দা হওয়ায় একই জেলার আইনমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে সুবিধা নিয়েছেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন থানায় পোষ্টিং পেতে এবং দাপট দেখাতে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে , শাল্লা থানায় ২০১৭ সালের ১১ জুলাাই ওসি হিসাবে যোগদানের পর ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওসির দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে পতিত আওয়ামী সরকারের তৎকালীন আইনমন্ত্রীর দাপট দেখিয়ে ওই থানায় মামলা বাণিজ্য, থানায় যাওয়া ভোক্তভোগীদের নানা হয়রানী, অসদাচরণ পোষাকী ক্ষমতার অপব্যবহার সহ নানা অনিয়ম, ঘুস দূনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন দেলোয়ার। সেই থানায়ও বেশীদিন ঠিকতে পারেননি দেলোয়ার। তাকে প্রত্যাহার করা হয়।

পরবর্তীতে সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ,মধ্যনগর) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মোয়জ্জেম হোসেন রতনের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে নিজেকে আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য দাবি করে অনেকটা কৌশলে আস্থাভাজন হয়ে ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ধর্মপাশা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসাবে যোগদান করেন দেলোয়ার।

এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। মামলা বাণিজ্য, জুয়ার আসর চালানো, চোরাচালান বাণিজ্য,মাদক কারবারিদের সাথে সখ্যতা,জলমহাল দখল পাইয়ে দিতে একাধিক জলমহাল ব্যবসায়ীর নিকট থেকে দু’হাতে কামিয়েছেন ঘুসের টাকা।

বিধিবাম ওই সময়ে তার বেপরোয়া ঘুষ-বাণিজ্য,নানামুখী হয়রানীতে সংক্ষুদ্ধ হয়ে তাকে প্রত্যাহার ও বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে নাগরিক সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন এবং সমাবেশ করেন ধর্মপাশা উপজেলা সদরে।

২০২১ সালের ৫ এপ্রিল পর্য়ন্ত দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় জনসার্থে ধর্মপাশা থানা থেকে পুলিশ হেডকোয়াটার্সের নির্দেশে তাকে ফের ধর্মপাশা থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

বার বার থানা থেকে প্রত্যাহারের সুযোগ সন্ধানী দেলোয়ার অপেক্ষা করতে থাকেন হাওর সীমান্ত জনপদঘেষা, অপরাধ প্রবণ এলাকা, সীমান্ত চোরাচালানের ঘাঁটি, জাদুকাটা , মাহারাম, শান্তিপুর, কলাগাঁও ছড়া নদীতে থাকা খনিজ বালি পাথর সমৃদ্ধ সিলেট রেঞ্জের সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানায় পোষ্টিং নিতে।

৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর খোলস পাল্টে নিজেকে বিএনপি ঘরানার পুলিশ পরিদর্শক হিসাবে পরিচিতি করতে থাকেন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অন্দর মহলে।

পুলিশের খুলনা রেঞ্জের খুলনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কর্মরত স্টেনোগ্রাফার কাম কম্পিউটার অপারেটর ও সিলেট রেঞ্জের সুনামগঞ্জ সদর ট্রাফিকে কর্মরত এক টিআইকে মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে ধরা দেয় সেই কাস্খিত তাহিরপুর থানার ওসির পোষ্টিং।

তাহিরপুর থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসাবে ২০২৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন চতুর দেলোয়ার। এরপর কখানো নিজেই সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে আবার কোন কোন সময় থানা, বাদাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, টেকেরঘাট অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের কিছু বিপথগামী অসৎ অফিসারদের মাধ্যমে , ব্যক্তিগত সোর্সকে কাজে লাগিয়ে সীমান্ত চোরাচালানে, মামলা, গ্রেফতার বাণিজ্য, জাদুকাটা নদীর খনিজ বালি পাথর পরিবেশ ধ্বংসী সেইভ মেশিনে,নদীর পাড় কেটে বিভিন্ন কৌশলে চুরি করিয়ে দু’হাতে লুটেপুটে ঘুসের টাকায় নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গুণধর ওসি দেলোয়ার।

অভিযোগ উঠেছে, তাহিরপুরে থাকা বিআইড্রব্লিউটির নামে অতিরিক্ত চাঁদাবাজি,ইজারাবিহীন শ্রীপুর-ডাম্পোর বাজার খেয়াঘাটের আড়ালে কোটগাড়ির নামে পাটলাই নদীর নৌ পথে চাঁদাবাজি, জাদুকাটা নদীর ঘাগড়া ঘাটের চাঁদাবাজি, বড়ছড়া, চারাগাঁও, বাগলী শুল্ক ষ্টেশনে কয়লা-চুনাপাথরসহ নানা চোরাকারবারি ও জাদুকাটা নদীর ইজারাদার চক্রকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে গোপনে লাখ লাখ টাকা ঘুস আদায় করছেন গুনধর ওসি দেলোয়ার।

তাহিরপুর থানার সামনের সড়ক পথ ব্যবহার করে ভারতীয় চিনি,পেয়াজ, মসলা,কসমমেটিকসের পিক যাতায়াত করলেও ওসির ইশারায় নিরাপদেই চলছে চোরাচালান বাণিজ্য।

সম্প্রতি একাধিক অটোরিক্সায় করে নিয়ে যাওয়া চিনির বড় চালান আটকের পরও ওসি চিনির চালান ছেড়ে দেন।
থানা সদর, বাদাঘাট, বালিজুরি, শ্রীপুর বাজার, একতাবাজার, লাকমা,বড়ছড়া,সহ পুরো থানা এলাকা জুড়ে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক ভারতীয় সেখ নাসির বিড়ি কারবারি রয়েছে।

থানা থেকে মাসোহারা দিয়ে গোপন সমঝোতায় আনা স্টাইকের (অলিখিত) মাসিক চুক্তির নামে ভারতীয় বিড়ি ব্যবসার আড়ালে বিড়ি চোরাকারবারিরা বিদেশি মদ, গাঁজা,ইয়াবা কারবার চালিয়ে গেলেও ওসি এসব চোরাকারকার ও চোরাকারবারিদের প্রতিরোধের নামে দায়সারা ভাব দেখান বলেও অভিযোগ রয়েছে।

তাহিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের নিকট থাকা সরকারি মোবাইল ফোনে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বক্তব্য জানতে কল করা হলেও ফোন কল ধরেননি।