shrestonews
ঢাকাআজ: শুক্রবার,১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ/১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • অন্যান্য

অটোগাড়ীর চাপে ১৮ ভেঙ্গে গেল দুই কোটি টাকার সেতু (ভিডিও)

মাহবুব বিশ্বাস, বরগুনা
ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫ ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ । ৩০ জন
Link Copied!
একাত্তর পোস্ট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ব্যাটারী চালিত অটোগাড়ীর চাপে ১৮ বছরেই ভেঙ্গে গেল দুই কোটি টাকার আয়রণ সেতু। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার অনিয়মের কারনে অল্প দিনের মধ্যেই ভেঙ্গে পরেছে। দ্রুত ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন তারা। ঘটনা ঘটেছে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে আমতলী উপজেলার চন্দ্রা আউয়াল নগর এলাকায়। মঙ্গলবার দুুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম ও উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ইদ্রিস আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন।

জানাগেছে, আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তর ২০০৭-০৮ অর্ধ বছরে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চাওড়া নদীর উপর চন্দ্রা আউয়াল নগর এলাকায় আয়রণ সেতু নির্মাণের দরপত্র আহবান করে। ওই সেতুর নির্মাণ কাজ পায় তৎকালিন হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি শহীদুল ইসলাম মৃধা।

অভিযোগ রয়েছে, সেতু নির্মাণকালে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা প্রভাবখাটিয়ে দায়সারা নির্মাণ করেছেন। নিম্মা মানের ভীম ও অ্যাঙ্গল দেয়ায় নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় সেতুর মাঝের ভীম নড়বড়ে হয়ে যায়। গত ১৩ বছর ধরে ওই নড়বড়ে সেতু দিয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন ও চাওড়াসহ উপজেলার অন্তত ত্রিশ হাজার মানুষ চলাচল করে আসছেন। সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুইজন যাত্রী নিয়ে একটি ব্যাটারী চালিত অটোগাড়ী পাড় হচ্ছিল। ওই সময় সেতুর দুই তৃতীয়াংশ ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যায়। অটোগাড়ীসহ যাত্রীরা নদীতে পড়ে যায়। খবর পেয়ে স্থানীয়রা অটোগাড়ীটি নদী থেকে তুলে কিনারা আনেন।

উল্লেখ্য, গত বছর ২২ জুন একই খালে একই ঠিকাদার নির্মিত হলদিয়াহাট সেতুর উপরে ১৬ জন বরযাত্রী নিয়ে মাইক্রোবাস পাড়াপাড়ের সময় সেতু ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যায়। ওই সময় ১০ জন যাত্রী নিহত হয়। কিন্তু প্রকৌশলী বিভাগ ও প্রশাসন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। সোমবার রাতে আবার একই ঠিকাদারের নির্মিত চন্দ্রা আউয়ালনগর সেতু ব্যাটারী চালিত অটোগাড়ীর চাপে ভেঙ্গে পরেছে।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চাওড়া ইউনিয়ন পাড়ের সেতুর দুই তৃতীয়াংশ ভেঙ্গে নদীতে পড়ে আছে। হলদিয়া ইউনিয়নের অংশ দাড়িয়ে আছে।

স্থানীয় নাশির হাওলাদার বলেন, রাতে ডাকাডাকির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি সেতু ভেঙ্গে অটোগাড়ী নদীতে পড়ে গেছে। পরে অটোগাড়ী ও যাত্রীদের কিনারে তুলে আনি। তিনি আরো বলেন, সেতুটি নির্মাণ কালেই ঠিকাদার অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে নির্মাণ করেছে। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই সেতু নড়বড়ে হয়ে যায়। এ সেতুতে কয়েকবার মেরামত করেছে কিন্তু কাজে আসেনি। ১৮ বছরের মাথায় প্রায় দুই কোটি টাকার সেতু এভাবে ভেঙ্গে যাবে তা মেনে নেয়া যায় না। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান তিনি।

দুলাল প্যাদা ও জালাল মীর বলেন, সেতুটির দুই তৃতীয়াংশ ভেঙ্গে নদীতে পড়ে গেছে। অটোগাড়ী ও যাত্রীদের তেমন সমস্যা হয়নি। তারা আরো বলেন, সেতু না থাকায় দুই ইউনিয়নের অন্তত ৩০ হাজার মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে। দ্রুত এখানে গাডার সেতু নির্মাণের দাবী জানান তারা।

আহত মিরাজ সিপাহী বলেন, গাড়ীটি সেতুর মাঝ বরাবর আসামাত্রই ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যাই। কিন্তু কারো কোন ক্ষতি হয়নি।

ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। কেননা গত ৫ আগষ্ট থেকে তিনি এলাকা ছাড়া। তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।

আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ইদ্রিস আলী বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি। ওই সেতুটি ঝুকিপুর্ণ ছিল। আগেই গাড়ী পাড়াপাড়ে সকর্তীকরণ নোটিশ এবং পিলার গেড়ে দেয়া ছিল।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, খবর পেয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বরগুনা জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মেহেদী হাসান বাংলা টাইমসকে বলেন, সেতু নির্মাণ কালেই ঠিকাদার অনিয়ম করেছেন। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই সেতু ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, গত বছর ওই সেতুটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা করে সতর্কীকরণ নোটিশ দেয়া হয়েছিল কিন্তু স্থানীয়রা তা না মেনে সেতুতে গাড়ী নিয়ে ওঠায় এমন অবস্থা হয়েছে। তারপরও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।