shrestonews
ঢাকাআজ: সোমবার,৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ/১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • অন্যান্য

ইটভাটা নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ইঁদুর-বিড়াল খেলা

শহিদুল ইসলাম দইচ, যশোর
জানুয়ারি ১১, ২০২৫ ৬:৪৩ অপরাহ্ণ । ৩৩০ জন
Link Copied!
একাত্তর পোস্ট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইটভাটা ব্যবসায়ীদের বৈধতা দেয়া নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর ইঁদুর-বিড়াল খেলা খেলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ক্ষতির শিকার হয়ে তার মাশুল গুণছেন যশোরের ৮৬টি ইটের ভাটার মালিকরা।

এসব অভিযোগ করেছেন যশোর জেলার ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তর দায়ী করছে জেলা প্রশাসনকে। আর জেলা প্রশাসন বলছে এ দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। তিন মাস আগে এই প্রতিবেদক যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরে যান জেলায় ইটভাটার সংখ্যা, এর মধ্যে বৈধ কতটি এবং অবৈধ কতটি জানার জন্য।

দপ্তরটির উপ-পরিচালক মো. ইমদাদুল হক এবং সহকারী পরিচালক সৌমেন মিত্র এই প্রতিবেদককে তথ্য না দিয়ে দুই সপ্তাহ ঘোরান। পরে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য নিতে আবেদন করতে বলেন। তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করা হলে শুরু হয় লুকোচুরি খেলা। পরে তারা যশোর জেলায় ১১৪টি ইটির ভাটার তালিকা দেন।

কিন্তু ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি নাজির আহমেদ মুন্নু ও সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা বাবুলের নাম দেননি যশোর পরিবেশ অধিদপ্তর।এরপরে এই প্রতিবেদক খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ পরিচালক সাদেকুল ইসলামের কাছে আপিল করেন। এই প্রতিবেদককে নোটিশ করে ডাকা হয়। যথাসময়ে এই প্রতিবেদক হাজির হলেও যশোরের উপ-পরিচালক ইমদাদুল হক হাজির ছিলেন না।

তিনটি নোটিশের পরে সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখায় ৫৬৪ টাকা জমা দিলে নতুন করে আবার তিন দিন ঘুরিয়ে তথ্য দেন। নতুন এই তথ্যে ইট ভাটার সংখ্যা ১১৬ টি। তার মধ্যে ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি এবং সেক্রেটারির নাম আছে।

যশোর ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেসার্স ফাইম ব্রিক্সের স্বত্বাধিকারী মো. সেলিম রেজা বাবুল অভিযোগ করেন, আমরা যশোর জেলায় ইট ভাটা ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স, কাস্টম এক্সসাইজে ভ্যাট, ট্যাক্স, ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র, কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শকের ছাড়পত্র, কর্মচারীদের স্বাস্থ্যসনদ, জমি থেকে মাটি কেনার বাণিজ্যিক খাজনা প্রদানসহ সকল ধরনের শর্ত পূরণ করি। তারপরেও পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিচ্ছে না। অথচ আমরা ইট ভাটার মালিকরা প্রতিবছর সরকারকে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা টাকা দেই।

এরপরেও আমরা ব্যবসায়ীরা বিড়াল-ইঁদুরের খেলার শিকার হচ্ছি।

মালিক সমিতির সভাপতি ভৈরব ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী নাজির আহমেদ মুন্নু বলেন, প্রতিবছর জেলা প্রশাসকের এলআর ফান্ডে টাকা দেই। এছাড়া ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চসহ জাতীয় সকল দিবসে জেলা প্রশাসকের প্রোগ্রামে টাকা দেই। আমাদের বৈধতা দেয়া হলে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আসতো। আমরাও শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করতে পারতাম। কখনো পরিবেশ অধিদপ্তর আবার কখনো ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে পৃথক অভিযানে যান ইট ভাটাগুলোতে। অভিযানে কখনো ভাটা ভেঙে দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। আবার লাখ লাখ টাকা জরিমানা করে তা আদায় করেন।

গত সপ্তাহে দশটি ইটের ভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছেন। আমাদের দুঃখ কেউ বোঝে না, আমাদের কথা কেউ লেখে না।পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে যশোর জেলায় ১১৬টি ইটের ভাটা। তারমধ্যে বৈধ ইটের ভাটা ৩০টি এবং অবৈধভাবে চলছে ৮৬টি।

বক্তব্য নেয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের পরিচালক সাদেকুল ইসলামকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।অনুরূপ যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এবং সহ পরিচালক মো.ইমদাদুল হক ও সৌমেন মিত্রও ফোনকল রিসিভ করেননি।

তবে, পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন পরিদর্শক নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি পরিপত্র দেন এই প্রতিবেদকের হাতে। তিনি বলেন, নতুন করে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ইটভাটার ছাড়পত্র দেওয়ার সুযোগ নেই। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত।

জানতে চাইলে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, যশোরে নতুন এসেছি। এখানকার অনেক কিছুই আমার অজানা। আগে কী হয়েছে, জানা নেই। তবে ইটের ভাটায় লাইসেন্স বা ছাড়পত্র , পরিবেশ অধিদপ্তর, কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, ফায়ার, কাস্টম সবকিছু ঠিক থাকলে লাইসেন্স দিতে আপত্তি থাকার কথা নয়।