উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) লন্ডন যাচ্ছেন। লন্ডনের হিথরো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সরাসরি উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি হবেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেএম জাহিদ হোসেন। এর মাধ্যমে ৭ বছর পর মায়ের সাথে সশরীরে সাক্ষাৎ হবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের।
জানা গেছে, কাতার আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো ‘বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স’ ফ্লাইটে মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাত ১০টায় লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন খালেদা জিয়া।
রবিবার (৫ জানুয়ারি) রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সব সদস্যদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপি নেত্রী। এছাড়াও এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ এবং রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারীর সঙ্গেও পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
লন্ডনে পৌঁছানোর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতারা খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাবেন। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে, যেখানে তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
চিকিৎসা শেষে দ্রুতই বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন, এমন আলোচনা এখন দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে।
এর আগে, চোখ ও পায়ের ফলোআপ চিকিৎসার জন্য ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া। পরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে তিনি যাত্রাবিরতি করেন। ১৬ জুলাই বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে বেগম জিয়া লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর অসুস্থতার কারণে বেশকিছুদিন ধরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এরপর দীর্ঘ ২৫ মাস পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। এরপর থেকেই তার সাথে কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন তিনি। তবে বয়স বিবেচনায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তার সাথে ফাতেমাকে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান ওই আদেশ দেন।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল যাবে। তারা হলো-তার প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলী রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, মো. সাহাবুদ্দিন তালুকদার, নুর উদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ আল মামুন, শরীফা করিম স্বর্ণা, খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার, সহকারী একান্ত সচিব মো. মাসুদুর রহমান, প্রটোকল অফিসার এস এম পারভেজ এবং গৃহকর্মী ফাতিমা বেগম ও রূপা শিকদার।
প্রতিনিধিদের তালিকা ইতিমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় দীর্ঘদিন ভুগতে থাকা ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া প্রথমে লন্ডনে তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে যাবেন। লন্ডনে ছেলের বাসায় কয়েক দিন থাকার পর বিএনপির চেয়ারপারসন লিভারের উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি কেয়ার ইউনিটে খালেদা জিয়া লিভারের চিকিৎসা নেবেন।
ইতিমধ্যে তার যাবতীয় চিকিৎসার কাগজপত্র, বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্টসমূহ সেখানে পাঠানো হয়েছে।
ওই হাসপাতালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গত ২৬ অক্টোবর ঢাকায় এসে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার লিভার ও পেটের ফ্লুইড জমা ও রক্তক্ষরণ রোধে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিশেষ পদ্ধতি টিআইপিস-টিপস সম্পন্ন করেছিলেন। তাদের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম বিএনপির চেয়ারপারসনের লিভার ট্রান্সপ্লান্টের চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করবে।