shrestonews
ঢাকাআজ: শুক্রবার,১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ/১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মায়ের মতোই খালেদা জিয়াকে আগলে রেখেছেন ফাতেমা

নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ৬, ২০২৫ ১:১৭ অপরাহ্ণ । ৩১৯ জন
Link Copied!
একাত্তর পোস্ট অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার (৬ জানুয়ারি) রাতে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। এরপর দিন বুধবার সকালে তিনি লন্ডনে পৌঁছবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় তার ওঠার কথা রয়েছে। তবে এবারও তার সফর সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম।

বেগম খালেদা জিয়া যখন কারাগারে ছিলেন তখনও তার সাথে ছিলেন ফাতেমা। খালেদা জিয়ার কারাজীবনের একমাত্র সঙ্গী ৩৫ বছর বয়সী গৃহপরিচারিকা।

দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর অসুস্থতার কারণে বেশকিছুদিন ধরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এরপর দীর্ঘ ২৫ মাস পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। এরপর থেকেই তার সাথে কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন ফাতেমা। পরে সবমিলিয়ে দীর্ঘ ৭৭৪ দিন খালেদা জিয়াকে সঙ্গ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। বন্দির সাথে গৃহপরিচারিকা থাকা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি থেকেছেন জেলে কিংবা হাসপাতালে।

তবে বয়স বিবেচনায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তার সাথে ফাতেমাকে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান ওই আদেশ দেন।

শুধু কারাগারেই নয়, অতীতেও যেকোন বিপদে-আপদে খালেদা জিয়ার পাশেই থাকতে দেখা গেছে ফাতেমাকে। সবসময় তার পাশেই থাকতেন। এমনকি খালেদা জিয়ার হাটাচলায় অসুবিধা হলে ফাতেমার সহায়তা নিতেন তিনি। হাসপাতাল থেকে মুক্ত হওয়ার সময়ও খালেদা জিয়ার হুইলচেয়ারের পাশেই দেখা যায় ফাতেমাকে।

ফাতেমা বেগমের বাড়ি ভোলায়। দীর্ঘদিন থেকে খালেদা জিয়ার গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করছেন। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসার জন্য আনা হলে সেখানেও আসেন ফাতেমা। কারারক্ষীদের সাথে তিনিও কেবিনে খালেদা জিয়ার সার্বিক দেখাশোনা করতেন।

গুলশানে বেগম খালেদা জিয়ার আবাস্থল ‘ফিরোজা’য় থাকছেন ২০১০ সাল থেকে। তখন থেকেই গৃহপরিচারিকা হিসেবে সবকিছু দেখভাল করতেন ফাতেমা।

এদিকে, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে রাজকীয় বহরের বিশেষ বিমান দিয়েছেন। ওই বিমানে সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা-সংবলিত এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। সেটিতেই লন্ডনে যাবেন খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল যাবে। তারা হলো-তার প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলী রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, মো. সাহাবুদ্দিন তালুকদার, নুর উদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ আল মামুন, শরীফা করিম স্বর্ণা, খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার, সহকারী একান্ত সচিব মো. মাসুদুর রহমান, প্রটোকল অফিসার এস এম পারভেজ এবং গৃহকর্মী ফাতিমা বেগম ও রূপা শিকদার।

প্রতিনিধিদের তালিকা ইতিমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় দীর্ঘদিন ভুগতে থাকা ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া প্রথমে লন্ডনে তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে যাবেন। লন্ডনে ছেলের বাসায় কয়েক দিন থাকার পর বিএনপির চেয়ারপারসন লিভারের উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি কেয়ার ইউনিটে খালেদা জিয়া লিভারের চিকিৎসা নেবেন।

ইতিমধ্যে তার যাবতীয় চিকিৎসার কাগজপত্র, বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্টসমূহ সেখানে পাঠানো হয়েছে।

ওই হাসপাতালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গত ২৬ অক্টোবর ঢাকায় এসে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার লিভার ও পেটের ফ্লুইড জমা ও রক্তক্ষরণ রোধে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিশেষ পদ্ধতি টিআইপিস-টিপস সম্পন্ন করেছিলেন। তাদের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম বিএনপির চেয়ারপারসনের লিভার ট্রান্সপ্লান্টের চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করবে।